ভাব-সম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই

৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাব-সম্প্রসারণ নিচে দেওয়া হলো:

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই 1

মূলভাব: মানব জীবন সংক্ষিপ্ত হলেও পৃথিবীতে মানুষ স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকে তার কীর্তির মাঝে। আর সে কীর্তি মানুষের কর্মসাধনারই ফল।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ মাত্রই জন্ম মৃত্যুর অধীন। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করলে অনিবার্যভাবে একদিন তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে আর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সে জগৎ সংসার থেকে নিঃশেষ হয়ে যায়। কিন্তু কীর্তিমান ব্যক্তির দৈহিক মৃত্যু ঘটলেও তার স্মৃতি পৃথিবীর বুকে চির অম্লান হয়ে থাকে। পৃথিবীতে সে নিজস্ব কৃতির মহিমায় লাভ করে অমরত্ব সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলে পৃথিবীতে কেউ তাকে স্মরণ করে না। অথচ কীর্তিমান বা কোন মহৎব্যাক্তির মৃত্যু হলে পৃথিবীর বুকে সে চির স্মরণীয় হয়ে থাকে। কীর্তিমানের মৃত্যু হলে তার দেহের ধ্বংস সাধন হয় বটে কিন্তু তার সৎ কাজ, অম্লান কীর্তি পৃথিবীর মানুষের কাছে তাকে বাঁচিয়ে রাখে। তার মৃত্যুর শত শত বছর পরেও মানুষ তাকে স্মরণ করবেই।

তাই একথা না বললে নয় যে, মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা তার কর্মের সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মানুষ পৃথিবীতে আসে এবং সে সময়সীমা পার হওয়ার সাথে সাথে সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। এ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সে যদি গৌরবজনক কোন কাজ করে তাহলে তার মৃত্যুর পরও সে এই পৃথিবীর বুকে চির স্মরণীয় হয়ে থাকে । বেঁচে থাকে হাজার হাজার মানুষের অন্তরে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে গিয়ে প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন। 

তাদের মধ্যে ছিল সালাম, বরকত, রফিক , জব্বার ও নাম না জানা আরো অনেকেই। তাদের রাক্তের বিনিময়ে আজ আমার আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে ফিরে পেয়েছি। তাদের এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে তাঁরা আজ পৃথিবীর বুকে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। বেঁচে আছেন প্রতিটা মানুষের । মানুষ তাঁর অমর কীর্তির মাঝেই সারাজীবন বেঁচে থাকে। যদি সে তাঁর জীবনে কোনো মহৎ কীর্তি না করে তাহলে সে হারিয়ে যায় কালের গহ্বরে। 

মন্তব্য: মানুষের দেহ নশ্বর কিন্তু তার কীর্তি অবিনশ্বর। মানুষের কল্যাণে কেউ যদি অবিরাম কাজ করে প্রতিষ্ঠা করেন অমর কীর্তি তবে মৃত্যুর পরও কীর্তির মধ্য দিয়েই তিনি বেঁচে থাকেন মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায়। সুতরাং, একটি কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে কীর্তিমানের মৃত্যু নেই । [ এই ভাবসম্প্রস্রণটি পাঞ্জেরী বই থেকে সংগ্রহকীত]

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই 2

মূলভাব: মানব জীবন সংক্ষিপ্ত হলেও পৃথিবীতে মানুষ স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকে তার কীর্তির মাঝে এবং তাদের কার্মের জন্যই কিছু কিছু মানুষ সমাজে , দেশে ও জগতে চির অমর হয়ে থাকে।

সম্প্রসারিত ভাব: ইংরেজিতে একটি কথা আছে, Man does not live in years but in deeds. মানুষের কর্মজীবন স্বল্পস্থায়ী হতে পারে, আবার হতে পারে দীর্ঘস্থায়ীও। জীবনের ব্যাপ্তিকাল দিয়ে মানুষের মূল্যায়ন করা হয় না। মানুষের প্রকৃত মূল্যায়ন হয় তার কর্মের মধ্যে। বয়স বেশি হলেই বাঁচা সার্থক হয় না। বরং যারা অমোঘ মৃত্যুর কথা জেনেও সংক্ষিপ্ত জীবন মানবকল্যাণে সুকীর্তির স্বাক্ষর রেখে যান, তাঁরা মরে গিয়েও চিরকাল মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকেন। মানুষ তাদের সুকীর্তির কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে মাথা নোয়ায়। তাদের দৈহিক মৃত্যু ঘটলেও মানুষের মাঝে তারা বেঁচে থাকেন চিরকাল ধরে।

পৃথিবীর স্মরণীয় ও বরণীয় ব্যক্তিগণ শুধু তাদের কর্মের মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে অমর, অক্ষয় ও শ্রদ্ধাভাজন হয়ে আছেন। পৃথিবীতে বহু লোক অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করেও তাদের কর্মের জন্য অমর হয়ে আছেন। আবার কেউ দীর্ঘায়ু পেলেও তাদের নাম পরিচয় মিশে গেছে কালস্রোতে। বালক ক্ষুদিরাম দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে অমর হয়েছেন। রফিক, বরকত , সালাম জব্বার বাংলা ভাষা আদায়ের অকালে মৃত্যুবরণ করলেও বাংলার মানুষ কোনদিন তাদেরকে ভুলবে না। মাত্র ২১ বছর বেঁচে থেকে প্রতিভাবান কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন। কর্মই তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে ---বয়স নয়।

মন্তব্য: বিশ্বজগতে অনন্তকাল প্রবাহে মানুষের জীবন নিত্যান্তই ক্ষণস্থায়ী। এ ক্ষণস্থায়ী জীবন মহিমা পেতে পারে মানুষের মহৎ কর্মে ও অবদানে। তখন মৃত্যুর পরও মানুষ স্মরণীয় হয়ে থাকে। তাই বয়স মানুষের জীবনের সার্থকতা মাপকাঠি নয়, মহৎ কীর্তির মাধ্যমেই মানুষের জীবন সফল ও সার্থক হয়। তাই বলা যায় কীর্তিমানের মৃত্যু নেই।

আজকের আলোচিত ভাব সম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
⏳ 00:00